Header Ads

Header ADS

182 মান্নত করা


* জালেম সে ব্যক্তি যে শয়তানের পথে ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের জন্য মানত করে, তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করার সাধ্য কারো নেই,বাক্বারাহ-270


وَ مَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ نَّفَقَةٍ اَوْ نَذَرْتُمْ مِّنْ نَّذْرٍ فَاِنَّ اللّٰهَ یَعْلَمُهٗؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ اَنْصَارٍ


মান্নত পূরণ করার বিনিময়ে জান্নাতে যা থাকবে ৭৬: আদ-দাহর:৫-৭


اِنَّ الْاَبْرَارَ یَشْرَبُوْنَ مِنْ كَاْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُوْرًاۚ


عَیْنًا یَّشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللّٰهِ یُفَجِّرُوْنَهَا تَفْجِیْرًا


یُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ وَ یَخَافُوْنَ یَوْمًا كَانَ شَرُّهٗ مُسْتَطِیْرًا


* কসম ভেঙে ফেলার কাফ্‌ফারা হচ্ছে,দশ জন মিসকিনকে আহার দান করো,তাদেরকে কাপড় পরাও বা একটি গোলামকে মুক্ত করো,যে ব্যক্তি,তিন দিন রোযা রাখো,মায়িদাহ:৮৯,


لَا یُؤَاخِذُكُمُ اللّٰهُ بِاللَّغْوِ فِیْۤ اَیْمَانِكُمْ وَ لٰكِنْ یُّؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُّمُ الْاَیْمَانَۚ فَكَفَّارَتُهٗۤ اِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسٰكِیْنَ مِنْ اَوْسَطِ مَا تُطْعِمُوْنَ اَهْلِیْكُمْ اَوْ كِسْوَتُهُمْ اَوْ تَحْرِیْرُ رَقَبَةٍؕ فَمَنْ لَّمْ یَجِدْ فَصِیَامُ ثَلٰثَةِ اَیَّامٍؕ ذٰلِكَ كَفَّارَةُ اَیْمَانِكُمْ اِذَا حَلَفْتُمْؕ وَ احْفَظُوْۤا اَیْمَانَكُمْؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمْ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ


* দুই প্রকার মান্নতের কথা এই হাদীসে বর্ণিত, মান্নতের কাফ্‌ফারা কসমের কাফ্‌ফারার মত-নাসায়ী,৩৮৪৫


عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺَ يَقُولُ: " النَّذْرُ نَذْرَانِ: فَمَا كَانَ مِنْ نَذْرٍ فِي طَاعَةِ اللَّهِ فَذَلِكَ لِلَّهِ وَفِيهِ الْوَفَاءُ، وَمَا كَانَ مِنْ نَذْرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ فَذَلِكَ لِلشَّيْطَانِ وَلَا وَفَاءَ فِيهِ، وَيُكَفِّرُهُ مَا يُكَفِّرُ الْيَمِينَ


* তুমি কোন কাজের মানত করার পরে তার বিপরীত করার মধ্যে কল্যাণ দেখতে পেলে কল্যাণকর কাজটিই করবে এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারা প্রদান করবে।জামে' আত-তিরমিজি, ১৫২৯


 وَإِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَيْتَ غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَائْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَلْتُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ


* মানত ভাগ্যের পরিবর্তন করতে অক্ষম জামে' আত-তিরমিজি ১৫৩৮


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ‏ "‏ لاَ تَنْذِرُوا فَإِنَّ النَّذْرَ لاَ يُغْنِي مِنَ الْقَدَرِ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ


 ৩, তৃতীয় প্রকার মান্নত শরিয়ত সম্মত নয়,অহেতুক মানত-খেলায় জিতলে মদপান করবো,টংগি হেটে যাবো


* বৃদ্ধা দুই ছেলের উপর ভর দিয়ে চলছে হজ্জ করার জন্য,পায়ে হেটে হজ্জ করার মানত করছে-মুসলিম-4139


رَأَىَ شَيْخًا يُهَادَى بَيْنَ ابْنَيْهِ فَقَالَ ‏"‏ مَا بَالُ هَذَا ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا نَذَرَ أَنْ يَمْشِيَ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ إِنَّ اللَّهَ عَنْ تَعْذِيبِ هَذَا نَفْسَهُ لَغَنِيٌّ ‏"‏ وَأَمَرَهُ أَنْ يَرْكَبَ


* রাসূল (সা:) খুতবাহ দিচ্ছেন আবু ইসরাইল রোধে দাড়িয়ে আছে-বুখারী ৬৭০৪


عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ بَيْنَا النَّبِيُّ ﷺ يَخْطُبُ إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَائِمٍ فَسَأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا أَبُو إِسْرَائِيلَ نَذَرَ أَنْ يَقُومَ وَلاَ يَقْعُدَ وَلاَ يَسْتَظِلَّ وَلاَ يَتَكَلَّمَ وَيَصُومَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مُرْهُ فَلْيَتَكَلَّمْ وَلْيَسْتَظِلَّ وَلْيَقْعُدْ وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ


* কোন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মান্নত করা, যেমন কবরে মাযারে মান্নত করা শির্ক ও কবীরা গুনাহ। মান্নত একমাত্র আল্লাহর জন্যই হতে হবে,আলে-ইমরান ৩৫


اِذْ قَالَتِ امْرَاَتُ عِمْرٰنَ رَبِّ اِنِّیْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِیْ بَطْنِیْ مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّیْۚ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ


* বৃদ্ধার নালিশ দাউদ আ: এর কাছে আটা বাতাশে নিয়ে যায় পথে সোলাইমান আ: এর সঙ্গে সাক্ষাত, মানত জায়েজ সেটা হবে শরিয়ত সম্মত মাজারে নয়




--------------------




 আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। যেমন আমরা কখনো কখনো বলি, যদি আমি পরীক্ষায় পাশ করি তাহলে মাদরাসায় একটি ছাগল দান করব। এটি একটি মানত। 


অতএব, কোনো বিষয় অর্জিত হওয়ার শর্তে কোনো কিছু করার ওয়াদাকে সাধারণত: আমরা মানত বলে থাকি। কেউ বলে মানত, আবার কেউ বলে মান্নত। তবে এটি শর্তযুক্ত মানত। 


আবার শর্তহীন মানতও আছে। যেমন, আনন্দের খবর শুনে কেউ বলল, আমি এটা লাভ করেছি? তাই আমি মসজিদে একটি ফ্যান দান করব। এটাও মানত। তবে শর্তহীন। 




মানত কাকে বলে? 


আমরা বাংলাতে বলি মানত । আরবিতে বলা হয়نذر (নযর)


বহুবচনে নুযুর।


মানত বা নযরের আভিধানিক অর্থ হল, নিজের দায়িত্বে নেয়া। যা নিজের দায়িত্ব নয় তা অপরিহার্য করে নেয়া।


শরয়ি পরিভাষায় মানত বলা হয় : নিজের উপর এমন কিছু ওয়াজিব (আবশ্যিক) করে নেয়া যা আসলে ওয়াজিব ছিল না। সেটা শর্তযুক্তও হতে পারে আবার শর্ত মুক্তও হতে পারে।




এক. মানত দুই প্রকার। 


(ক) মানতের বিষয় হবে শরিয়ত অনুমোদিত ভাল কাজ। যেমন কেউ বলল, যদি আমি সুস্থ হই তাহলে তিনটি রোজা রাখব। এখানে মানতের বিষয়টি শরিয়ত অনুমোদিত একটি ইবাদত ও আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের বিষয়। শর্ত পূরণ হলে এ মানত আদায় করতে হবে।


(খ) শরিয়ত নিষিদ্ধ-মন্দ ও আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ করার মানত। যেমন কেউ বলল, আজ যদি অমুক দল খেলায় জিতে যায় তাহলে আমি তোমাদেরকে মদ পান করাব। এ মানত পূরণ করা মোটেই জায়েয নয়। মানতের শর্ত পূরণ হোক বা না হোক। কারণ এতে আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা বিদ্যমান।


এ ছাড়াও আরেক প্রকার মানত আছে যা অনর্থক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সেটাও পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন কেউ বলল, আমি যদি রোগমুক্ত হই। তাহলে ময়মনসিংহ থেকে পায়ে হেটে টঙ্গীর ইজতেমায় যোগ দেব। এ মানত একটি অনর্থক। ময়মনসিং থেকে টঙ্গী পর্যন্ত হেটে যাওয়ার মধ্যে নিজেকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। কাজেই এ ধরনের মানত পূরণ করা হবে অর্থহীন কাজ তাই তা পূরণ করা হবে না।


যেমন হাদীসে এসেছে :




عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَىَ شَيْخًا يُهَادَى بَيْنَ ابْنَيْهِ فَقَالَ ‏"‏ مَا بَالُ هَذَا ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا نَذَرَ أَنْ يَمْشِيَ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ إِنَّ اللَّهَ عَنْ تَعْذِيبِ هَذَا نَفْسَهُ لَغَنِيٌّ ‏"‏ ‏.‏ وَأَمَرَهُ أَنْ يَرْكَبَ ‏.‏




আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এর কি হয়েছে? তারা উত্তরে বলল, তিনি পায়ে হেঁটে চলার মানত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ ব্যক্তি নিজেকে কষ্ট দেয়ায় আল্লাহর কোনো লাভ নেই। এবং তাকে বাহনে চড়ার নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম হাদীস নং ৪৩৩৬)


হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম, লোকটি এমন একটি কাজের মানত করেছিল, যা আদায়ে তার কোনো লাভ নেই। কিংবা অন্য কারোও কোনো উপকার নেই। এটি একটি অনর্থক কাজ। যা করে নিজেকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এ মানত পালন থেকে নিষেধ করেছেন। অতএব এ ধরনের মানত কেউ করলে তা পূরণ করা যাবে না।


আরেকটি হাদীস দেখুন :




عن ابن عباس رضي اللَّه عنهما قال : بيْنما النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يَخْطُبُ إِذَا هُوَ بِرجُلٍ قَائِمٍ ، فسأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا : أَبُو إِسْرائيلَ نَذَر أَنْ يَقُومَ فِي الشَّمْس وَلا يقْعُدَ ، ولا يستَظِلَّ ولا يتَكَلَّمَ ، ويصومَ ، فَقالَ النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ ولْيَستَظِلَّ ولْيُتِمَّ صوْمَهُ » رواه البخاري .




আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার খোতবা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবিগণ বললেন, আবু ইসরাইল। মানত করেছে যে, রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না। ছায়ায় (বিশ্রামে) যাবে না, কারো সাথে কথা বলবে না এবং রোজা রাখবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বললেন: তোমরা তাকে আদেশ দাও যেন কথা বলে, ছায়াতে যা এবং রোজা পূর্ণ করে। (বুখারি)




এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম 


এক.নিজ সত্তা বা ধর্মের জন্য ক্ষতিকর এমন মানত করলে তা আদায় করা যাবে না। যেমন আলোচ্য ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, ছায়ায় না বসা, কথা না বলার মানত করেছিল। পাশাপাশি রোজা রাখারও মানত করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শুধু রোজা রাখতে বললেন আর অন্যগুলো পালন করতে নিষেধ করলেন। এমনিভাবে মানত করার মাধ্যমে কোনো বৈধ বিষয়কে নিজের জন্য অবৈধ করা যায় না। তদ্রুপ অবৈধ কোনো কিছুকে বৈধ করা যায় না। যেমন কেউ মানত করল আমি ইলেকশনে জিতে গেলে একটি গানের আসর করব। এ ধরনের মানত পালনযোগ্য নয়।


দুই. কৃত মানত যদি সওয়াবের বিষয় হয় তবে তা আদায় করতে হবে। আর যদি অনর্থক কোনো বিষয় হয় তবে আদায় করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:




من نذر أن يطيع الله فليطعه ، ومن نذر أن يعصي الله فلا يعصه




যে আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করেছে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে আল্লাহর নাফরমানি করার মানত করেছে সে যেন তাঁর নাফরমানি না করে।




* মানত পূরুন করার নির্দেশ :—


﴿إِنَّ الْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِن كَأْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا﴾




 




৫.) (বেহেশতে) নেককার লোকেরা৬পানপাত্র থেকে এমন শরাব পান করবে যাতে কর্পূর পানি সংমিশ্রিত থাকবে।




﴿عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفْجِيرًا﴾




 




৬.) এটি হবে একটি বহমান ঝর্ণা।৭আল্লাহর বান্দারা৮ যার পানির সাথে শরাব মিশিয়ে পান করবে এবং যেখানেই ইচ্ছা সহজেই তার শাখা-প্রশাখা বের করে নেবে।৯




﴿يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا﴾




 




৭.) এরা হবে সেসব লোক যারা (দুনিয়াতে) মানত পূরণ করে১০ সে দিনকে ভয় করে যার বিপদ সবখানে ছড়িয়ে থাকবে।




﴿وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا﴾




 




৮.) আর আল্লাহর মহব্বতে১১ মিসকীন, ইয়াতীম এবং বন্দীকে১২ খাবার দান করে১৩




****** পড়ুন *******


একদিন এক বৃদ্ধা এসে হযরত দাউদ (আ.)-এর কাছে নালিশ করলেন, হে আল্লাহর নবী! আমি বাজার থেকে কিছু আটা নিয়ে আসার পথে হঠাৎ বাতাস আমার আটাগুলো উড়িয়ে নিয়ে যায়। এখন আমি খালি হাতে বাড়ি গিয়ে মেহমান ও ছেলে-মেয়েদের কী খাওয়াবো? অতএব, আপনি বাতাসের এই অপরাধের বিচার করুন। দাউদ নবী বললেন, মা বাতাসের বিচার কীভাবে করবো? বাতাস আমার অধীনে নয়। অতএব, তার পরিবর্তে কিছু আটা দিচ্ছি, তুমি আটা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাও। বুড়ি মা আটা নিয়ে যখন বাড়িতে রওনা দিলেন। পথের মধ্যে হযরত সোলায়মান (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, হে বুড়ি খলিফার কাছে ভিক্ষা নিতে এসেছিলে? বৃদ্ধা বললেন না বাবা, আমি এসেছিলাম বাতাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার উদ্দেশ্যে। হযরত সোলায়মান (আ.) বিস্তারিত শুনে বললেন, তুমি খলিফার নিকটে পুনরায় যাও এবং বল আমি আপনার নিকট এসেছি বিচার প্রার্থী হয়ে, ভিক্ষা নিতে আসিনি। বৃদ্ধা পুনরায় দাউদ (আ.)-এর কাছে গিয়ে আটা ফেরত দিলেন এবং অভিযোগ পেশ করলেন। তখন দাউদ (আ.) বুড়িকে রাজি করিয়ে দশ মণ আটা দিলেন। বুড়ি মা আটার বস্তা বহনকারীদের নিয়ে যখন পূর্বের স্থানে পৌঁছলেন, তখন সোলায়মান (আ.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন কী হে বৃদ্ধা! তোমার অভিযোগের বিচার পেয়েছ, না ভিক্ষা বাড়িয়ে নিয়েছ? তখন বৃদ্ধা খলিফার ব্যবহারের কথা বললেন। তখন হযরত সোলায়মান বললেন, তুমি আরও অনেক কিছু পাবে। এর জন্য তুমি পুনরায় খলিফার নিকট গিয়ে বাতাসের বিচারের প্রার্থী হও। ভিক্ষা নিয়ে বিদায় হইও না, বৃদ্ধা দেখল খলিফার নিকট গেলেই তার সম্পদ বৃদ্ধি পায়। অতএব, শাহজাদার মতো এক বিরাট ব্যক্তিত্বের কথায় তিনি আবার যাবে। তাতে তার ভয়ের কোনো কারণ নেই। খলিফা রাগ করলেই তিনি শাহজাদা সোলায়মান (আ.)-এর কথা বলে দেবেন। এই সমস্ত চিন্তা করে বৃদ্ধা পুনরায় দাউদ (আঃ) -এর কাছে গিয়ে বললেন। হুজুর অভিযোগের বিচার না করে ভিক্ষা বাড়িয়ে দিলেন। এতে আপনি কেয়ামতের দিন নিজেকে ন্যায় বিচারক বলে দাবি করতে পারবেন না। আমি সেদিন কিন্তু বলব খলিফা আমার অভিযোগের বিচার করেননি। খলিফা বৃদ্ধার কথা শুনে বললেন, তোমাকে এসব কথা কে শিখিয়ে দিয়েছে? বৃদ্ধা বললেন, শাহজাদা সোলায়মান (আ.) আমাকে সব কিছু বলে দিয়েছেন। তখন হযরত দাউদ (আ.) শাহজাদা সোলায়মানকে দরবারে ডাকলেন। হযরত দাউদ (আ.) হযরত সোলায়মান (আ.)কে বললেন, তুমি বারবার বৃদ্ধাকে আমার কাছে পাঠিয়ে আমাকে হয়রান করে তুলছ কেন? বাতাস কি আমার অধীন যে, আমি তাকে এনে বৃদ্ধার সামনে বিচার করব? এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। অতএব এ বিষয়ে বৃদ্ধাকে তুমি বারবার কেন পাঠাচ্ছো? হযরত সোলায়মান (আ.) আল্লাহর কাছে বাতাস হাজির করার জন্য দোয়া করার কথা বললেন, হযরত দাউদ (আ.) সোলায়মানকে সঙ্গে নিয়ে হাত উঠিয়ে দোয়া করলেন, সঙ্গে সঙ্গে বাতাস এসে আকৃতি নিয়ে হাজির হয়ে গেল। তখন দাউদ (আ.) বাতাসকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এ বৃদ্ধার আটা কেন উড়িয়ে নিয়েছ? বাতাস উত্তর দিল, হে আল্লাহর খলিফা বৃদ্ধা যখন আটা নিয়ে বাসায় ফিরছিল, তখন গভীর সমুদ্রে একটি জাহাজের তলদেশ ছিদ্র হয়ে যাত্রীরা ও বহু মূল্যবান মালামাল তলিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় যাত্রীরা মান্নত করে, যদি তাদের জাহাজ বিপদ থেকে রক্ষা পায়, তাহলে তারা জাহাজের সব মালামাল গরিব দুঃখীদের দান করে দেবে। আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। জাহাজ উদ্ধারের নিমিত্তে আমাকে নির্দেশ প্রদান করেন। আমি তখন বৃদ্ধার আটা উড়িয়ে নিয়ে সে জাহাজের তলদেশের ছিদ্র বন্ধ করে দেই। ফলে জাহাজ ও যাত্রীরা মৃত্যু থেকে রক্ষা পায়। হযরত দাউদ (আ.) বাতাসকে জিজ্ঞেস করলেন, জাহাজটি এখন কোথায়? বাতাস বলল, এইমাত্র এই শহরের প্রান্তে সমুদ্র তীরে নোঙর করেছে। তখন তিনি বললেন, তুমি তাহলে যেতে পার, আমি জাহাজের খবর নিচ্ছি। দাউদ (আ.) জাহাজের যাত্রী ও নাবিকদের ডাকলেন, তারা উপস্থিত হলেন। তিনি বললেন, জাহাজের মালামাল গরিব দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করার অঙ্গীকার করেছ। তাই বৃদ্ধাকে মালামালের অর্ধেক দিয়া দিবে। বাকি অর্ধেক গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করবে। জাহাজের নাবিক ও যাত্রীরা খলিফার আদেশ শিরোধার্য করে নিল। বৃদ্ধাকে তাদের সঙ্গে নিয়ে গেল এবং জাহাজের সমুদয় মালামাল খালাশ করে সঠিকভাবে বণ্টন করে অর্ধেক বৃদ্ধাকে দিয়ে দিল। বাকি অর্ধেক গরিব দুঃখীদের দান করল। 


.


এই ঘটনা থেকে জানা গেল, জাহাজের যাত্রীরা এই মহা বিপদ থেকে বাঁচার জন্য মান্নত করল এবং মান্নতের উছিলায় আল্লাহ পাক যাত্রীদের জীবন রক্ষা করলেন। সুতরাং মান্নত সম্পূর্ণ রূপে জায়েজ ও শরীয়ত সম্মত। যে বা যারা বলে মান্নত করা জায়েজ নাই,, প্রকৃত রূপে তারাও না জায়েজেদেরই দলভুক্ত।




أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ وَهْبٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي ابْنُ إِسْحَاقَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَجُلٍ، مِنْ أَهْلِ الْبَصْرَةِ، قَالَ: صَحِبْتُ عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " النَّذْرُ نَذْرَانِ: فَمَا كَانَ مِنْ نَذْرٍ فِي طَاعَةِ اللَّهِ فَذَلِكَ لِلَّهِ وَفِيهِ الْوَفَاءُ، وَمَا كَانَ مِنْ نَذْرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ فَذَلِكَ لِلشَّيْطَانِ وَلَا وَفَاءَ فِيهِ، وَيُكَفِّرُهُ مَا يُكَفِّرُ الْيَمِينَ "




ইমরান ইব্‌ন হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:




তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ মান্নত দুই প্রকার। যেই মান্নত আল্লাহ্‌র আনুগত্যের জন্য করা হয়, তা আল্লাহ্‌র জন্য। আর তা পূর্ণ করতে হবে। আর আল্লাহ্‌র নাফরমানীতে যে মান্নত করা হয়, তা শয়তানের জন্য, আর তা পূর্ণ করার প্রয়োজন নেই। আর মান্নতের কাফ্‌ফারা তা-ই, যা কসমের কাফ্‌ফারা হয়ে থাকে।


  




সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩৮৪৫


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস




حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى الصَّنْعَانِيُّ، حَدَّثَنَا الْمُعْتَمِرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ يُونُسَ، هُوَ ابْنُ عُبَيْدٍ حَدَّثَنَا الْحَسَنُ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ يَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ لاَ تَسْأَلِ الإِمَارَةَ فَإِنَّكَ إِنْ أَتَتْكَ عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا وَإِنْ أَتَتْكَ عَنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا وَإِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَيْتَ غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَائْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَلْتُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ ‏"‏ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ وَجَابِرٍ وَعَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ وَأَبِي الدَّرْدَاءِ وَأَنَسٍ وَعَائِشَةَ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَأُمِّ سَلَمَةَ وَأَبِي مُوسَى ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏




আবদুর রাহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:




তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আবদুর রাহমান! শাসকের পদ চেয়ে নিও না। কেননা এ পদ চাওয়ার কারণে তোমার আয়ত্বে এলে তোমাকে এর যিম্মায় (সহায়হীনভাবে) ছেড়ে দেয়া হবে। এ পদটি যদি না চাইতেই তোমার আয়ত্বে আসে তবে তুমি (দায়িত্বভার বহনে) সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। তুমি কোন কাজের মানত করার পরে তার বিপরীত করার মধ্যে কল্যাণ দেখতে পেলে কল্যাণকর কাজটিই করবে এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারা প্রদান করবে।




সহীহ্, ইরওয়া (৭/১৬৬), (৮/২২৮,২৬০১) সহীহ্ আবূ দাউদ (২৬০১), নাসা-ঈ




ফুটনোটঃ


আলী, জাবির, আদী ইবনু হাতিম, আবুদ দারদা, আনাস, আইশা, আবদুল্লাহ ইবনু আমর, আবূ হুরাইরা, উম্মু সালামা ও আবূ মূসা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আব্দুর রহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। 




জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৫২৯


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস




حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ تَنْذِرُوا فَإِنَّ النَّذْرَ لاَ يُغْنِي مِنَ الْقَدَرِ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏ وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ بَعْضِ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَغَيْرِهِمْ كَرِهُوا النَّذْرَ ‏.‏ وَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ مَعْنَى الْكَرَاهِيَةِ فِي النَّذْرِ فِي الطَّاعَةِ وَالْمَعْصِيَةِ وَإِنْ نَذَرَ الرَّجُلُ بِالطَّاعَةِ فَوَفَّى بِهِ فَلَهُ فِيهِ أَجْرٌ وَيُكْرَهُ لَهُ النَّذْرُ ‏.‏




আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:




তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মানত কর না। কেননা মানত ভাগ্যের পরিবর্তন করতে অক্ষম। এর দ্বারা কৃপণ লোকের কিছু আর্থিক খরচ হয় মাত্র।




সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (২১২৩), নাসা-ঈ




ফুটনোটঃ


ইবনু উমার (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীস মোতাবিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল অভিজ্ঞ সাহাবী ও তৎপরবর্তী আলিমগণ আমল করেছেন। তারা মানতকে মাকরুহ বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক বলেন, ‘মানত করা মাকরুহ’ কথার তাৎপর্য এই যে, আনুগত্য ও নাফরমানী উভয় ক্ষেত্রেই মানত করা মাকরূহ। কোন লোক আনুগত্যমূলক কাজে নযর মানার পর তা সম্পন্ন করলে সে সাওয়াবের অধিকারী হলেও এ ধরনের মানত মাকরুহ। 




জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৫৩৮


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস




কোন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মান্নত করা, যেমন কবরে মাযারে মান্নত করা (শিরনী দেয়া) অত্যন্ত গর্হিত কাজ ও ঈমান বিনষ্টকারী শির্ক ও কবীরা গুনাহ। কারণ, মান্নত একমাত্র আল্লাহর জন্যই হতে হবে। 


আল্লাহ তা‘আলা বলেন :


﴿ ... رَبِّ إِنِّي نَذَرۡتُ لَكَ مَا فِي بَطۡنِي مُحَرَّرٗا ...٣٥ ﴾ [ال عمران: ٣٥]  


‘‘হে পালনকর্তা! আমার গর্ভে যে সন্তান রয়েছে আমি তাকে তোমার উদ্দেশ্যে মান্নত করলাম।’’ (আলে-ইমরান : ৩৫)

No comments

Powered by Blogger.